রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন
জিকির উল্লাহ জিকু:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করার ঘটনা দেড় মিনিটের মধ্যেই ঘটে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কি এমন ঘটেছিল, কেন গুলি করা হলো-সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র্যাব। এ কারণেই ওসি প্রদীপ সহ ঘটনার তিন মুল আসামীদের নিয়ে পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যাবের তদন্তদল। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্র পরিদর্শন করেন তারা। এসময় ঘটনাস্থল তল্লাশী চৌকির সামনে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের মত করে হত্যার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ। এঘটনায় অভিযুক্ত ও রিমান্ডে থাকা ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে পৃথকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। দুপুর ১টার দিকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্ণেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযুক্ত আসামীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তরা নিজেদের মত করে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। এসময় অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্ণেল তোফায়েল মোস্তাফা সরওয়ার ছাড়াও র্যাবের আইন ও মিডিয়া উইং প্রধান লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ এবং সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামসহ র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার জানান, ‘আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছি, কেন এই ফায়ারিংটা সংগঠিত হয়েছিল? এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কি এমন ঘটেছিল, সিনহা গুলিবিদ্ধ হয়েছিল? কিংবা লিয়াকত যেটা বলছে, পিস্তল তাক করে ফেলেছিল-এই মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কি এমন হয়েছিল, পিস্তল তাক করার মত পরিস্থিতি আসলেই হয়েছিল কিনা আর সেই বা কেন ফায়ার করল? আমাদের অনেক তথ্য উপাত্ত সংগৃহিত হয়েছে। সেটার আলোকেই আইও নিজেকে সন্তুষ্ট করার জন্য, যাতে কোনভাবেই কোন নির্দোষ ব্যক্তি সাজা না পায় এবং কোন দোষী ব্যক্তি যেন কোনভাবেই ছাড় না পায়।’
তোফায়েল মোস্তফা বলেন, ‘রিমান্ডে থাকা আসামী, স্বাক্ষী ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে তদন্ত অনেক এগিয়েছে। এটি তদন্তের স¦ার্থে এখন বলা মামলার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
প্রসঙ্গ, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো: রাশেদ। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দুজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী প্রথমে কক্সবাজার জেলা কারাগার ও পরে আদালতের ৭ দিনের রিমান্ড আদেশের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে রয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে আটকের আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্তকারি সংস্থা র্যাব। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ প্রত্যেক আসামীকে ৭ দিনের রিমান্ড মন্জুর করেন।
ভয়েস/আআ